ফ্রান্সের রাজোনীতিতে শনির দশা
মন্ত্রীসভা গঠনের এক দিনের মাথায় পদত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী
নিয়োগের মাত্র এক মাসেরও কম সময়ের মাথায় এবং মন্ত্রীসভা গঠনের এক দিন পরই ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সেবাস্টিয়াঁ লেকরনু পদত্যাগ করেছেন। এ নিয়ে গত প্রায় দেড় বছরে ৫ জন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেন।
সোমবার সকালে এলিসি প্রাসাদে গিয়ে প্রেসিডেন্ট এমমানুয়েল ম্যাকরোঁর কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি, যা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন লেকরনু, কিন্তু তাঁর সরকারের গঠন ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে শুরু থেকেই তীব্র সমালোচনা হচ্ছিল।
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন একটি “নতুন যুগের সরকার” গঠনের, যেখানে রাজনৈতিক ভারসাম্য ও সহযোগিতার নতুন অধ্যায় শুরু হবে; কিন্তু নতুন মন্ত্রিসভার ঘোষণার পর থেকেই তাঁর দলের অভ্যন্তরে ও বিরোধীদলে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
সরকারের বেশিরভাগ পদেই আগের মুখদের রেখে তিনি কার্যত সংস্কারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন বলে সমালোচনা ওঠে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, লেকরনুর সরকার “প্রতিশ্রুত পরিবর্তন” প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ম্যাকরোঁর আগের নীতিরই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এমনকি তাঁর নিজ দল ‘লা রিপাবলিক অঁ মার্শ’-এর অনেক সদস্যও মন্ত্রিসভার ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো পার্লামেন্টে টিকে থাকা তাঁর জন্য শুরু থেকেই কঠিন ছিল, এবং শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছে। পদত্যাগের আগে লেকরনু সংসদে আস্থা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তবে দলীয় ভেতর থেকেই ভিন্নমত দেখা দেওয়ায় তিনি পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল মনে করেন।
তাঁর পদত্যাগে দেশজুড়ে নতুন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলোর বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, এ পদত্যাগ ম্যাকরোঁর দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ধাক্কা।
নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ এখন প্রেসিডেন্টের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়াবে, কারণ সংসদে কোনো দলই স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। আর্থিক বাজারেও এই অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে—ইউরোর মানে সামান্য পতন দেখা গেছে এবং বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষা করছেন নতুন সরকারের নীতির দিকনির্দেশনার জন্য।
রাজনৈতিক অস্থিরতার এই মুহূর্তে ফরাসি জনগণের মধ্যে সরকার পরিচালনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে এবং মনে হচ্ছে ম্যাকরোঁর সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি স্থিতিশীল ও বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব দ্রুত প্রতিষ্ঠা করা।