এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

সেলিব্রিটির আড়ালে অভিকের 'অপরাধ সাম্রাজ্য'

সেলিব্রিটির আড়ালে অভিকের 'অপরাধ সাম্রাজ্য'

অভিক আনোয়ার। পুরো নাম এইচএম তৌহিদ আনোয়ার অভিক। রেসার হিসেবেই বাংলাদেশে পরিচিত। আর এ পরিচয়ের আড়ালেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে করেছেন নানান অপকর্ম। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনের অন্যতম হোতা সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের গড়ে তোলা সব অবৈধ সম্পদের পাহারাদারও এই অভিক। এমনকি দুই হত্যা মামলা মাথায় নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছেন দিব্যি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায় থাকলেও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঠিক কোন অদৃশ্য শক্তি তাকে সুরক্ষা দিচ্ছে, এমন প্রশ্ন এখন অনেকের মনে।

জানা গেছে, দুটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অভিক আনোয়ার। এর মধ্যে একটি কার হাউজ লিমিটেড ও টিবিএইচ কোং। তবে তার বিলাসবহুল জীবনের পেছনে রয়েছে ডিবির হারুনর আশীর্বাদ। কেননা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে হারুন পালিয়ে গেলেও বাংলাদেশে থাকা সম্পদের পাহারা দিচ্ছেন কথিত সেলিব্রিটি এই রেসার। তার আরেক ঘনিষ্ঠ কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি। এ দুজন মিলেই বর্তমানে হারুনের অবর্তমানে সব ধরনের কুকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। বিনিময়ে পাচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। 
 
সূত্র বলছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দুটি হত্যা মামলায় অভিক আনোয়ারের নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে একটিতে ৩৭ ও আরেকটিতে ৪০ নম্বর আসামি। কিন্তু মামলা থাকলেও তাকে ধরছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অথচ মাঝেমধ্যেই নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সময় দেন। নিজের রেসিং নিয়ে শিরোনাম হন বিভিন্ন গণমাধ্যমেও।

মূলত রেসিংয়ের অন্তরালে আওয়ামী লীগের বড় নেতাদের টাকা পাচারে সহায়তা করেন অভিক। আর এসব অপকর্মের অর্থ দিয়ে দুবাইয়ে গড়ে তোলেন গাড়ির ব্যবসা। এমনকি মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও করতেন তিনি। অভীকের মাধ্যমে অর্থপাচার বা লুট করা আওয়ামী লীগের নেতাদের এমন অনেকের নাম এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। 

অবৈধভাবে পাচারের টাকায় বর্তমানে স্ত্রী-সন্তান আর শ্বশুরবাড়ির সবাইকে নিয়ে দুবাইয়ে রাজকীয় জীবনযাপন করছেন অভিক। অথচ মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন নিজের গর্ভধারিণী মাকে। অভিক শুধু আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই সুবিধা নেননি। বাবা মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়ে নিয়েছেন সব অর্থ। তার বাবা আনোয়ার হোসেনও ছিলেন আওয়ামী লীগের দোসর।

এখানেই শেষ নয়, নিজের আপন বড় ভাইকে মাদক সরবরাহ করে দিতেন অভিক। আর এ মাদকই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার বড় ভাইয়ের। মাদকের মাধ্যমে পাগল বানিয়ে বাবার কোম্পানি থেকে দূরে সরিয়ে আত্মসাৎ করেছেন ভাইয়ের সম্পত্তি। নিজের ভাইকে পাগল বলে প্রমাণ করিয়েছেন আওয়ামী লীগ, ডিবি হারুন ও তৌহিদ আফ্রিদি মিলে।

সম্পদের লোভে নিজের মাকে মারধর করেছেন একাধিকবার। প্রশাসনের কিছু অসাধু লোকজনকে টাকা দিয়ে মাকে কিছুদিন আগে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জেলে ঢুকিয়েছেন। মাকে মারধর করে একাধিকবার রক্তাক্ত করেছেন এই অভিক।

কানাডা প্রবাসী একমাত্র আপন বোনের পাসপোর্টের বিপরীতে জালিয়াতি করে ব্যান মডেলের একটি গাড়ি আমদানি করিয়েছেন তথাকথিত সেলিব্রিটি অভিক। ওই ইস্যু দিয়ে আওয়ামী লীগের সুবিধা নিয়ে আপন বোনকে ফাঁসিয়ে একই কায়দায় বাবার সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেছেন।

আমদানি ব্যান মডেলের গাড়ি নিশান সিলভিয়া, টয়োটা গ্লানজাসহ আরো অনেক গাড়ি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে আমদানি করেছেন আওয়ামী লীগেরর ক্ষমতা খাটিয়ে। পতিত ফ্যাসিবাদের এই দোসর আওয়ামী লীগের ক্ষমতার জোর খাটিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পারমিশন নিয়েছিল এই ব্যান মডেলের গাড়ি ছাড়ানোর জন্য।

অভিকের প্রথম স্ত্রী রিমিতা ফরিদ থাকতেই অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে গড়ে উঠেছিল। প্রভার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার কারণে তাকে তালাক দেন রিমিতা। অবশ্য রিমিতার কাছ থেকেও অনেক টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করেছেন অভিক আনোয়ার। 

রেসিংয়ের আড়ালে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা পাচার করে দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে। তার এই রেসিং হলো দুনিয়ার সামনে ভালো দেখানোর মুখোশ। মুখোশের আড়ালে আছে ভয়ংকর এক অন্ধকার জগৎ। লুটপাট, নিজের পরিবারের সম্পদ মেরে খাওয়া, মানুষের টাকা পয়সা মেরে খাওয়া। আওয়ামী লীগের দালালি আর অসৎ উপায়ে টাকা বানানোই তার নেশা। 

অভিকের কোম্পানি কার হাউস লিমিটেড ও টিবিএইচ কোম্পানির বিরুদ্ধে করফাঁকির ব্যাপারে এনবিআরের ৬০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের নিম্ন আদালতে মামলা চলমান। ডিবি হারুনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বহু মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল টাকা আদায় করতেন অভিক আনোয়ার ও তৌহিদ আফ্রিদি। আর এসব টাকা পাচার করেছেন দুবাই-কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে।