আওয়ামী আমলে ব্যাংক খাতে লুটপাট

তিন গভর্নরের বিরুদ্ধে তদন্ত

তিন গভর্নরের বিরুদ্ধে তদন্ত

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতে বেপরোয়া লুটপাট হয়েছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিলতা ও নীতি সহায়তা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ব্যাংক দখল করে নজিরবিহীনভাবে জনগণের টাকা আত্মসাতেও সহায়তা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু তাই নয়, লুটের টাকা বিদেশে পাচার করার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছিল একেবারেই চুপ। এসব অপকর্মের নেপথ্যে ছিলেন আলোচ্য সময়ের তিন গভর্নর-ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আবদুর রউফ তালুকদার। লুটের কারণে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে রাষ্ট্রের অর্থনীতি সুরক্ষার সর্বশেষ অস্ত্র ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকা’ দেওয়া হয়েছে কয়েকটি ব্যাংককে। এই ছাপানো টাকাও পাচার হয়েছে। এক্ষেত্রেও ‘নীরব দর্শক’-এর ভূমিকায় ছিল কর্তৃপক্ষ। এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা দেশের অর্থনীতিকে বিধ্বস্ত করেছেন। যার কারণে সাবেক তিন গভর্নরকে আইনের সামনে দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)-সহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে। বাদ যাচ্ছেন না তাদের সহযোগীরাও। তদন্ত চলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী ও বিএফআইইউ-এর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তদন্তে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো হলো-ঋণ জালিয়াতি, ব্যাংক লুট, ব্যাংক দখল, রিজার্ভ চুরি এবং টাকা ছাপানো। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

তদন্তে যেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-আওয়ামী আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় খেলাপিদের ঋণ পুনর্গঠন বা নবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়ার প্রক্রিয়াটি। ওই সময়ে একাধিকবার রাজনৈতিক বিবেচনায় সার্কুলার দিয়ে নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। কার নির্দেশে এসব নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। কারা সুবিধা নিয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের তৈরি করা খসড়া নীতিমালার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো খেলাপিকে ছাড় দিয়েছে কি না। এছাড়া রিজার্ভ চুরির ঘটনাটিও বিশেষভাবে তদন্ত করা হবে। এ খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ফরেনসিক তদন্তে জোর থাকবে। নেপথ্যে থেকে কারা এ ঘটনা ঘটাতে পারে বা কারা এর সুবিধাভোগী, তাও খতিয়ে দেখা হবে। রিজার্ভ চুরিকে হ্যাকিং বলে চালানো হলেও হ্যাকাররা চুরি করলে তা হয় অত্যন্ত সুসংগঠিতভাবে। কিন্তু রিজার্ভ চুরির পর তা নিয়ন্ত্রিত থাকেনি। ডলার গেছে ফিলিপাইনে। সেখান থেকে আবার জুয়ার আসরে। শ্রীলংকায় যেগুলো গেছে, সেগুলো হ্যাকাররা নিতে পারেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনরায় ফেরত পেয়েছে অল্পদিনের মধ্যেই।

২০২০ সালে করোনার সময় এবং ২০২২ সালে বৈশ্বিক মন্দা শুরুর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণের জোগান দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক দখল করে লুটপাটের কারণে ১১টি ব্যাংক দুর্বল হয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে ৭টি ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে তারল্যের জোগান দেওয়া হয়েছে। ছাপানো টাকার একটি অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়ার বিষয়টিও তদন্তের আওতায় থাকছে। ওই সময়ে প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যথাযথভাবে নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে।

সূত্র জানায়, ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়ার ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম রয়েছে, সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার তা মেনে চলেননি। তার নির্দেশমতো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়া হয়েছে। ফলে ওই গভর্নরের সময়েই মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।