স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ-চীনের সেতুবন্ধন

স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ-চীনের সেতুবন্ধন

ক্যানসার কিংবা জটিল কোনো রোগ; এসব ব্যাধি ধরা পড়লেই ছুটে যান ভারত-থাইল্যান্ডে। উদ্দেশ্য মেডিকেল। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে প্রতি বছরই দেশের সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশে যান লাখও মানুষ। সাধ্য না থাকলে অনেকে বিনাচিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরেন। তবে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় উন্নত চিকিৎসা পৌঁছাতে বাংলাদেশে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে চীন। আর এ অধ্যায় সূচিত হয়েছে বেল্ট অ্যান্ড রোড হেলথকেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে। 

প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় বেশ কিছু চমক দেখিয়েছে। আগস্ট মাসজুড়েই ছিল অনন্য আয়োজন তথা ‘নি হাও! চায়না-বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা উন্নয়ন প্রদর্শনী'। সবশেষ ২৬ আগস্ট এ সেমিনারের সমাপনী হয় রাজধানীর গুলশানে অভিজাত হোটেলে।

বেল্ট অ্যান্ড রোড হেলথকেয়ার সেন্টারের দ উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দুই দেশের স্বাস্থ্যখাতের অগ্রগতি আর উন্নয়নের ওপর জোর দেন বক্তারা। এক যৌথ বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী কোরবান আলী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. মারুফ মোল্লা বলেন, 'এই আন্তঃদেশীয় আয়োজনের মাধ্যমে আমরা চীনের উন্নতমানের চিকিৎসা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

চীনের অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন হাসপাতালের প্রতিনিধিরা জানান, তারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠাতে আগ্রহী। পাশাপাশি একাধিক আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশি চিকিৎসকদের জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রমে সহযোগিতা বাড়ানোরও অঙ্গীকার করেছেন চীনা প্রতিনিধিরা।

বেল্ট অ্যান্ড রোড হেলথকেয়ার সেন্টারের প্রধান নির্বাহী ডা. মারুফ মোল্লা বলেন, 'নি হাও! চায়না-বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা উন্নয়ন প্রদর্শনী’ কেবল একটি প্রদর্শনী নয়। বরং দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতা ও বিনিময়ের এক নতুন অধ্যায়। আমাদের লক্ষ্য হলো চীনের প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক চিকিৎসা বাংলাদেশি রোগীদের জন্য আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করা।'

গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানের কনসালটেন্ট ডা. রাশেদুল হাসান বলেন ‘নি হাও! চায়না-বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা উন্নয়ন প্রদর্শনীর মূল সাফল্য নির্ভর করছে গণমাধ্যমের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর। সাংবাদিক, পত্রিকা ও অন্যান্য গণমাধ্যম আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম এবং সেবামুখী প্রদর্শনীর অন্যতম অংশীদার। 

উপদেষ্টা ও ‘আমরা নারী’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এমএম জাহিদুর রহমান বিপ্লব বলেন, গণমাধ্যমের সহযোগিতার মাধ্যমেই আমাদের বার্তা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবে। একইসঙ্গে জনসচেতনতা বাড়াতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।

এছাড়া অনুষ্ঠানে নিজেদের অভিজ্ঞতা-সাফল্য ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে বেল্ট অ্যান্ড রোড হেলথকেয়ার সেন্টার। পাশাপাশি সাংবাদিকদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনা হয়। 

গত ৬ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ প্রদর্শনীর যাত্রা শুরু হয়। ৮ আগস্ট বনানীর হোটেল সারিনায় দিনব্যাপী প্রদর্শনীতে অংশ নেয় চীনের ১২টিরও বেশি শীর্ষ হাসপাতাল। এমনকি রোগীদের জন্য রাখা হয়েছিল অন-সাইট ও অনলাইন বিশেষজ্ঞ পরামর্শ, ভিসা সহায়তা, ফ্রি অনুবাদ সেবা ও বিমানবন্দর পিকআপ সুবিধা। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ-চীন স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং চিকিৎসা সহজলভ্য করার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। পরদিন একই স্থানে সংগীতানুষ্ঠান, নৈশভোজসহ নানান আয়োজন করা হয়। 

চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অংশগ্রহণে এসব আয়োজন শুধু রোগীদের জন্য নতুন সুযোগের দুয়ারই খোলেনি বরং বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক স্বাস্থ্য সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।